PSC ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পরীক্ষা: সময়সূচি, কেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা!
৩০শে আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কী করবেন? জেনে নিন প্রবেশপত্র ডাউনলোড থেকে শুরু করে পরীক্ষার সকল নিয়মকানুন।
BPSC Personal Officer Exam Date: সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি সুখবর! বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন (PSC) অবশেষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের অধীনে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (Personal Officer) পদের বাছাই (Preliminary) পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রার্থীরা অধীর আগ্রহে এই পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমি জানি, এই ঘোষণার পর অনেকের মনেই মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে – একদিকে যেমন প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের চাপ, অন্যদিকে স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছানোর উত্তেজনা। একজন চাকরি প্রতিবেদক হিসেবে আমি বহু প্রার্থীর এই জার্নিটা কাছ থেকে দেখেছি এবং জানি এই সময়টায় সঠিক ও স্বচ্ছ তথ্যের গুরুত্ব কতটা। এই আর্টিকেলে আমরা পরীক্ষার তারিখ, সময়সূচি থেকে শুরু করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড এবং পরীক্ষার হলে কী করবেন, তার A to Z গাইডলাইন তুলে ধরব।
এই লেখায় যা জানবেন
- পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি
- পরীক্ষার কেন্দ্র এবং পরীক্ষার্থীর সংখ্যা
- প্রবেশপত্র ডাউনলোড প্রক্রিয়া
- পরীক্ষার হলের গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী
- নম্বর বণ্টন ও নেগেটিভ মার্কিং
- শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি টিপস
পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি: চূড়ান্ত ঘোষণা
আপনার ক্যালেন্ডারে ৩০শে আগস্ট ২০২৫ তারিখটি মার্ক করে রাখুন। কারণ এই দিনেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পিএসসি ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পরীক্ষাটি ১ ঘণ্টা ধরে চলবে। নির্দিষ্ট করে বললে, বেলা ৩:৩০টা থেকে ৪:৩০টা পর্যন্ত এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
কিন্তু শুধু পরীক্ষার সময় জানলেই হবে না, গুরুত্বপূর্ণ হলো পরীক্ষার হলে কখন পৌঁছাতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীদেরকে বেলা ২টা থেকে ৩টার মধ্যে কেন্দ্রের প্রবেশ করতে হবে। আপনার জন্য একটি ব্যক্তিগত পরামর্শ হলো, কেন্দ্রে অবশ্যই আগে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। ঢাকার জ্যাম, কেন্দ্রের গেট খুঁজে পেতে দেরি, এসব কিছু মাথায় রেখে কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পৌঁছানো বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, ৩টার পর কোনো পরীক্ষার্থীকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আর এই ১-২ মিনিটের দেরি যেন আপনার এতদিনের স্বপ্নকে নষ্ট না করে, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
কেন্দ্র এবং আসন সংখ্যা: কোথায় হবে আপনার পরীক্ষা?
একটি বড় পরীক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা। এই পরীক্ষায় মোট ২২,৬৫৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। নিচে কেন্দ্রভিত্তিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যাসহ তালিকাটি দেওয়া হলো:
- সরকারি বাঙলা কলেজ: ৫,০০০ জন
- ঢাকা কলেজ: ৪,০০০ জন
- সরকারি তিতুমীর কলেজ: ৪,০০০ জন
- ইডেন মহিলা কলেজ: ৪,০০০ জন
- বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ: ৩,০০০ জন
- সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ: ২,২০৮ জন
- বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন সচিবালয়: ৪০০ জন
আপনার প্রবেশপত্রে আপনার নির্দিষ্ট কেন্দ্রের নাম, ঠিকানা এবং রুম নম্বর উল্লেখ থাকবে। তাই প্রবেশপত্র ডাউনলোড করার পর এই তথ্যগুলো ভালোভাবে দেখে নিন এবং প্রয়োজনে এক দিন আগে কেন্দ্রটি ভিজিট করে আসতে পারেন।
প্রবেশপত্র ডাউনলোড: এই ধাপটি ভুলবেন না!
প্রবেশপত্র ছাড়া পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে নিতে হবে। সুখবর হলো, নতুন করে কোনো প্রবেশপত্র ডাকযোগে পাঠানো হবে না। তাই আপনার নিজের দায়িত্বে এটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে।
ধাপে ধাপে প্রবেশপত্র ডাউনলোডের প্রক্রিয়া
১. অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন: আপনি দুটি ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন: – Commissions website: www.bpsc.gov.bd – Teletalk website: http://bpsc.teletalk.com.bd
২. ‘Admit Card’ সেকশনে যান: ওয়েবসাইটের হোমপেজে সাধারণত এই অপশনটি থাকে। সেখানে ক্লিক করুন।
৩. ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিন: আবেদনের সময় আপনি যে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পেয়েছিলেন, তা এখানে ইনপুট করুন। যদি ভুলে গিয়ে থাকেন, তাহলে ‘Recover User ID’ বা ‘Recover Password’ অপশন ব্যবহার করে তা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
৪. প্রিন্ট করে নিন: প্রবেশপত্র দেখতে পাওয়ার পর, সেটি রঙিন বা সাদা-কালো যে কোনো ফরম্যাটে প্রিন্ট করে নিন। চেষ্টা করবেন পরিষ্কার একটি প্রিন্ট কপি বের করতে। প্রয়োজনে একাধিক কপি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন, কারণ অনেক সময় অসাবধানতাবশত একটি কপি হারিয়ে যেতে পারে।
নম্বর বণ্টন ও নেগেটিভ মার্কিং: জানা জরুরি!
এই পরীক্ষায় মোট ১০০টি প্রশ্ন থাকবে এবং পূর্ণমান হবে ১০০। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর বরাদ্দ। কিন্তু এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নেগেটিভ মার্কিং। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা হবে।
এই নেগেটিভ মার্কিং-এর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক সময় আমরা না জানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে ভুল করে বসি। এতে সঠিক উত্তরের নম্বর থেকেও নম্বর কাটা যায়। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হলো, যে প্রশ্নগুলো সম্পর্কে আপনি ১০০% নিশ্চিত, কেবল সেগুলোর উত্তর দেওয়া উচিত। যদি কোনো প্রশ্ন নিয়ে সামান্যতম দ্বিধা থাকে, তাহলে সেই প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াই ভালো। এই কৌশলটি আপনাকে অপ্রয়োজনীয় নম্বর কাটা থেকে বাঁচাবে।
পরীক্ষার হলে কী নেবেন আর কী নেবেন না?
পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। এই নিয়মগুলোর কোনো একটিতে ভুল হলে আপনার পরীক্ষা বাতিল হতে পারে। PSC-এর বিজ্ঞপ্তিতে কিছু নির্দিষ্ট সামগ্রী কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
- যা যা নিষিদ্ধ:
- বই-পুস্তক
- ব্যাগ
- হাতঘড়ি, পকেটঘড়ি, ইলেকট্রনিক ঘড়ি
- মুঠোফোন বা স্মার্টফোন
- ক্যালকুলেটর বা কোনো রূপ ইলেকট্রনিক ডিভাইস
- যা যা অবশ্যই সাথে রাখবেন:
- প্রবেশপত্রের প্রিন্ট করা কপি
- বল পয়েন্ট কলম (সাধারণত কালো কালির কলম)
প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা আছে। যদি আপনার শ্রুতিলেখক (Scribe) প্রয়োজন হয়, তাহলে ১৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখের মধ্যে কমিশন সচিবালয়ের নন-ক্যাডার (পরীক্ষা) শাখার পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে।
পরীক্ষার এই শেষ মুহূর্তগুলো খুবই মূল্যবান। নতুন করে কিছু পড়ার চেয়ে এতদিন যা পড়েছেন, তা বারবার রিভিশন দিন। বিশেষ করে পিএসসির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। নিজের উপর আস্থা রাখুন এবং শান্ত মনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন। আর অবশ্যই পরীক্ষার দিন সব কাগজপত্র এবং নিয়মকানুন মেনে কেন্দ্রে যাবেন। মনে রাখবেন, সরকারি চাকরির এই পথে আপনার পরিশ্রম এবং একাগ্রতা আপনার সফলতার সবচেয়ে বড় পুঁজি।
পরীক্ষার প্রস্তুতি বা নিয়মকানুন নিয়ে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আপনার বন্ধুদের সাথেও এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন, যাতে তারাও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানতে পারে।